সামরিক দক্ষতায় নেতাজির জন্মদিন পালন করল বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু — যিনি ছিলেন ব্রিটিশ শাসনের লৌহকপাট ভেঙে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার লড়াইয়ের সাহস, মেধা ও বিদ্রোহী শক্তির সর্বোচ্চ প্রতিচ্ছবি। তাঁর জন্মদিন সামরিক শৌর্যের মধ্য দিয়ে পালন করাটাই আমাদের কর্তব্য।
২৩ জানুয়ারি, ২০২৫— কলকাতার মালাঙ্গা লেনে নেতাজির জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স, সেই বিপ্লবী সংগঠন যেটি গড়ে উঠেছিল নেতাজিরই হাত ধরে। ঠিক ১২:১৫-এ, তাঁর জন্মমুহূর্তে, শঙ্খধ্বনি, আতসবাজি, ব্যান্ডসঙ্গীত ও শত শত মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিধ্বনিত হলো সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। অনুষ্ঠানে সহযোগী সংগঠন ছিল জাতীয় আর্তত্রাণ সমিতি, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আগস্ট ১৯৪৬-এর ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-তে হিন্দু প্রতিরোধে কিংবদন্তি নেতৃত্বদানকারী শ্রী গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (গোপাল পাটঠা)।
উল্লেখযোগ্য যে, এই দুই সংগঠনের পূর্ববর্তী রূপ—বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স-এর ‘মুক্তিসংঘ’ ও আর্তত্রাণ সমিতির ‘আত্মোন্নতি সমিতি’—যৌথভাবে ২৬ আগস্ট ১৯১৪-র ঐতিহাসিক রডা অস্ত্র লুণ্ঠন অভিযান পরিচালনা করে ব্রিটিশ রাজকে স্তম্ভিত করে দেয়। ১১১ বছর পর, বঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে আবারও এই দুটি সংগঠন একত্রিত হলো—যখন ১৯৪৭-এর বিভাজনের পর বাংলার হিন্দুরা আজও বাংলাদেশে (যা আবার পূর্ব পাকিস্তানের ছায়ায় প্রবেশ করতে চলেছে) নির্যাতনের শিকার।
দীর্ঘ চারদিন ধরে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স-এর কর্মীরা আইএনএ ক্যাপ, বুট, সামরিক শৃঙ্খলা—সব নির্দেশ মেনে দৃঢ়তা, সংযম ও প্রত্যয়ে উদ্যাপনে যুক্ত ছিলেন। কোনও সংগ্রাম তার সাহিত্য ছাড়া পূর্ণ হয় না। তাই ইংরেজি, বাংলা ও হিন্দি ইত্যাদি ভাষায় বিপুল সংগ্রহ সম্বলিত একটি বিশেষ গ্রন্থ-প্রদর্শনী টেবিল রাখা হয়। সেখানে ছিল নেতাজি-সংক্রান্ত অসংখ্য বই, পাশাপাশি অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর, শ্রী সংঘসহ বহু বিপ্লবী সংগঠনের সাহিত্য—এমনকি বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স-এর নিজস্ব প্রকাশনাও। টেবিলে প্রদর্শিত ধারালো ঐতিহাসিক অস্ত্রসম্ভার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
শত শত মানুষের বিস্মিত প্রশ্ন—
“বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স কি আবার জেগে উঠেছে?”
শুনে মনে পড়ে গেল সেই হারিয়ে যাওয়া জাতীয়তাবাদী স্পৃহা, যার পুনর্জাগরণের স্বপ্নই ছিল আজকের আয়োজন।
একসময় বঙ্গপ্রেসিডেন্সির প্রতিটি প্রান্তেই দেখা মিলত লাঠি-তরোয়ালচালনায় পারদর্শী যুবকদের। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে একের পর এক আখড়া গড়ে তুলেছিল গোপন বিপ্লবী সংগঠনগুলো, যেখানে তরুণদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও শিখত আত্মরক্ষার কৌশল।
২৪ জানুয়ারি সেই ঐতিহ্যেরই পুনরাবৃত্তি ঘটাল বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স-এর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিশু-কিশোররা সংগঠনের ব্যাজ পরিহিত হয়ে চমৎকার লাঠি ও তরোয়ালচালনা প্রদর্শন করে। তাদের এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়ে দর্শকের করতালিতে ভরে ওঠে পরিবেশ।
এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় বিপ্লবী জাতীয় সংগ্রামভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতা, যা আশপাশের মানুষকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে। পাশাপাশি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাও ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত।
সংক্ষেপে বললে— বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম কঠোর, সাহসী ও আত্মবলিদানী বিপ্লবী সংগঠন, যার শত শত সদস্য মাতৃভূমির জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। আজ সংগঠনটি নতুন উদ্যমে এগোচ্ছে— নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সামরিক ও মানসিক আদর্শকে পুনরায় জীবন্ত করে তুলতে।